টেটরাসল সলিউশন ব্যবহারের ৫ টি সেরা উপকারিতা ও সতর্কতা ২০২৫

টেটরাসল সলিউশন ব্যবহারের ৫ টি সেরা উপকারিতা ও সতর্কতা ২০২৫

আপনি কি জানেন টেটরাসল সলিউশন কি?এটি কেমন করে ব্যাবহার করবেন?পাঠক তাহলে আপনি সঠিক জায়গাতেই এসেছেন।আজকাল চর্মরোগের ক্ষেত্রে এই সলিউশন ব্যাপকভাবে ব্যাবহার করা হচ্ছে।কিন্তু সঠিক নিয়ম জেনে ও সতর্কতা অবলম্বন করলে আপনার ফলাফল আরো ভাল হবে।

আজকের কন্টেন্ট এ আমি টেটরাসল সলিউশন ব্যাবহার,উপকারিতা ও সতর্কতা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।

পেজ সূচিপত্রঃ

টেটরাসল সলিউশন কী?

এটি মূলত স্কাবিস বা চুলকানী জাতীয় চর্মরোগ এর প্রতিরোধ এ কাজ করে।সারকোপ্টেস স্ক্যাবি নামক এক ধরনের মাইট বা পরজীবীর আক্রমনে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাল র‌্যাশের বা ছোট ছোট ফুসকুড়ি দেখা যায়।এটি ছোঁয়াচে রোগ খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করে।এই  সলিউশন এন্টি প্যারাসাইটসাইট ঔষধ হিসেবে দেহের ওই মাইট গুলো দ্রুততার সাথে কমিয়ে আনে এবং শ্বেত রক্তকণিকা কারযাবলী তে সাহায্য করে।

সালফিরাম ( আইএনএন ) বা মনোসালফিরাম যার বাণিজ্যিক নাম টেটমোসল , স্ক্যাবিসের চিকিৎসাতে এবং প্রতিরোধে ব্যবহৃত একটি ইক্টোপ্যারাসাইটিসাইড।এই উপাদানের ২৫% টেটরাসল এ বিদ্যমান থাকে।এটি এসিয়াই ফারমাসিউটিকাল নির্মিত স্কিন ডিসিস এ ব্যবহৃত একটি পণ্য।

এটি কোন কোন রোগে ব্যাবহার করা হয়?

আপনারা স্কাবিস বা পাঁছড়া রোগ সম্পর্কে জানেন।পরজীবী বা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনে মানব দেহে যে সমস্ত রোগ সৃষ্টি হয় তা প্রতিরোধ করতে এই সলিউশন ব্যাবহার করা হয়।এছাড়াও ছত্রাক জনিত বিভিন্ন রোগ ,একজিমা,দাদ,হাজা ,খুজলি তে এটির ব্যাবহার রয়েছে।এটি তকে চুলকানী বা র‌্যাশ তৈরি করে এমন সব মাইট বা পরজীবীর বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই করে এবং এদের বংশবিস্তার দ্রুততার সাথে কমিয়ে আনে।এর ফলে দেহে উপস্থিত মাইট সংখ্যায় আর বাড়তে পারেনা।

এটি সারকোপ্টেস স্ক্যাবি এর লাইফ সাইকেল পুরণ হতে দেয় না এবং শ্বেত রক্তকণিকা বা লিউকোসাইট এর কার্যাবলিতে সাহায্য করে যা দেহে মাইটের বিস্তার কমিয়ে আনে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত সুস্থ্য হয়ে যায়।এটিতে ব্যাক্টেরিয়া নাশক গুনাবলী রয়েছে।

এটির ৫ টি সেরা উপকারীতা ও ব্যাবহার বিধি

প্রথমে আমরা এর ব্যাবহার বিধি সম্পর্কে জানবো তারপর এর উপকারীতা নিয়ে আলোচনা করব।
টেটরাসল সলিউশন এর ব্যাবহার বিধিঃ
  • প্রথমে ভালোভাবে গোসল করে নিন।প্রয়জোনে সাবান বা স্যানিটাইজার ব্যাবহার করতে পারেন।
  • এরপর শুকনো শরীরে মূল সলিউশনের ১০ মিলি এর সাথে ১০ মিলি পানি অথবা নারিকেল তেল মিশিয়ে নিবেন।মূল দ্রবণ টি অনেক ঘন।আপনাকে পানি এবং সলিউশনের পরিমান সমান রাখতে হবে।
  • মাথা,মুখ বাদে গলা থেকে পা পরযন্ত সারা শরীরে ভালভাবে মেখে নিন।ঔষধ মাখার সাথে সাথেই কাপড় পরিধান করবেন না। না হলে অধিকাংশ সলিউশন কাপড়েই মেখে যাবে।১০ মিনিট পর কাপড় পরিধান করুন।
  • এই সলিউশন মাখার পর অন্তত ১০ থেকে ১২ ঘন্টা দেহে শুকাতে হবে প্রয়জোনে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে রোদেও শুকাতে পারেন।
  • আপনি ৩০ মিলি. টানা তিন দিন একই ভাবে ব্যাবহার করতে পারেন।প্রয়োজনে ৭ দিন ব্যাবহার করতে পারেন। ভালো ফলাফলের আশায়।
  • শুধু আক্রান্ত স্থানেই নয় অন্য যেসব ভালো ক্ষত বিহীন জায়গা আছে সেগুলোতেও প্রয়োগ করুন ,কারন মাইট ভাল ও সুস্থ্য ত্বকেও আক্রমন করতে পারে।
  • মনে রাখবেন এটি শুধু বাহ্যিক প্রয়োগের জন্য (Only For External Use).এটি কোন ভাবেই সেবন করা বা চোখ এর মত জলীয় অংশ,শ্লেষ্মিক অংশতে প্রয়োগ করা যাবেনা।ভুলবশত খেয়ে ফেললে বা অত্যন্ত জ্বালাপোড়া করলে দ্রুত আপনার নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
টেটরাসল সলিউশন এর উপকারীতাঃ
  • স্কাবিস রোগীদের জন্য ইহা মহা ঔষধ।এটা দেহের সারকোপ্টেস স্ক্যাবি মাইট গুলো দ্রুত সারিয়ে তোলে। ত্বকের অন্যান্য ভালো অংশ গুলোকে ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমন থেকে বাঁচায়।অসস্তিকর চুল কানীর হাত থেকে রক্ষা করে।
  • ছত্রাক ও ব্যাক্টেরিয়া জনিত অন্যান্য রোগ সংক্রমন এর হাত থেকেও বাঁচায়।
  • শরীরে অন্যান্য র‌্যাশ প্রতিরোধে, খোস-পাঁচড়া, পানি বিঁচি,খূজলি,ঘামাচি,দাদ,একজিমা, অন্যান্য ফাংগাল ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে ।
  • শরীরে প্রয়োগ বিধি সহজ।এরসাথে আপনি Bilastin 20mg রোজ একটি এবং Fugal 50ml ঔষধ খেতে পারেন।এভাবে প্রায় দুই সপ্তাহ খেলে আপনার এলারজির সমস্যা হ্রাস পাবে।
  • ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে আনতে ,মাইট এর ডিম ধংস করতে এবং লালচে ভাব কমিয়ে আনে।

এর  পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন?

যেহেতু এটি বাহ্যিকভাবে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে তাই অন্যান্য ঔষধ এর তুলোনায় এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া  অনেক অংশেই কম।যাদের ত্বক অত্যন্ত জ্বালাপোড়া করে বা অতি মাত্রায় সংবেদনশীল তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে ত্বক অধিক লালচে হয়ে গেছে।ভুলবশত খেয়ে থাকলে আপনার বমি বমি ভাব বা মাথা ঘুরতে পারে।

অ্যানাফিল্যাক্সিস হল একটি তীব্র অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া যা দ্রুত শুরু হয় যা শরীরের অনেক সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। এটি মাস্ট কোষ এবং বেসোফিল থেকে প্রদাহজনক মধ্যস্থতাকারী এবং সাইটোকাইনগুলির মুক্তির কারণে হয়, সাধারণত একটি ইমিউনোলজিক প্রতিক্রিয়ার কারণে তবে কখনও কখনও অ-ইমিউনোলজিক প্রক্রিয়া।যদি টেটরাসল সলিউশন ব্যবহারের  পর অ্যানাফিল্যাক্সিস ,
মাথায় চিন চিনে বেদনা ,শাসকষ্ট ইত্যাদি রেয়ার প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে এর ব্যাবহার বন্ধ করুন।কখনো সরাসরি কাটা স্থানে প্রয়োগ করবেন না। 

এটি ব্যাবহারে ঝিমুনি বা ঘোর ভাব দেখা দিতে পারে কি?

অনেকেই ভাবতে পারেন যেহেতু এটি চুলকানির ওষুধ তাই এতে ব্যাবহারে ঝিমুনি ভাব আসবে কিনা।কিন্তু এটা কেবল মাত্র শরীরের বাইরের অংশে ব্যাবহার করা হয়।তাই এমনটি ভাব বার কোন কারন নেই।এটি শরীরে ঝিমুনি বা ঘোর ভাব আনতে পারে না।

সংক্রামক স্কাবিস রোগে আক্রান্ত রোগীদের কিছু সতর্কতা

  • যারা এই রোগে আক্রান্ত তাদের ব্যাবহার করা জিনিস বাসন কোসন ,বিছানার চাদর,পোশাক অন্য কেউ যাতে ব্যাবহার না করে।বিশেষ করে পরিধেয় বস্ত্র ,চাদর এগুলো নিম পাতার পানিতে ফুটিয়ে কড়া রোদে শুকাতে হবে।যেগুলো দেরিতে কাচবেন সেগুলো আলাদা রুমে কেউ যাবেনা বা কারও স্পশ আসবে এমন জায়গায় লক করে রাখুন। রুম নিয়মিত ঝাট দিবেন পারলে ভ্যাকুম করবেন।
  • এই রোগ পুরপুরি সারার আগে কারো খুব বেশি ঘনিষ্ঠ হতে যাবেন না কারন আপনার মাধ্যমে সেও সংক্রমিত হতে পারেন।
  • যেখানে মানুষের গ্যাদারিং বেশি এমন জায়গায় যাবেন না।স্কুল,কলেজ,মেস,গণরুম ইত্যাদি।একেবারে সুস্থ্য হয়ে গেলে আপনি সোশাল গ্যাদারিং এ যাবেন।
শিশুদের ক্ষেত্রে এ জাতীয় রোগ হলে অসস্তিতে অনেক কান্নাকাটি করে।তাদের পরযাপ্ত ঘুম এর প্রয়োজন।এক্ষেত্রে ক্লোরাফেরিনামিন,ডাইফেন হাইড্রামিন এধরনের এন্টি হিস্টামিন H1 রিসেপ্টর কে শান্ত রাখতে সাহায্য করবে।যারা একটু বয়স্ক ড্রাইভিং জাতীয় কোন কাজ বা মেশিনারী কাজের সাথে জড়িত তারা ফেক্সফেনাডিন, ইবাস্টিন ,লোরা টাডিন টাইপ এন্টি হিস্টামিন টাইপ ঔষধ সেবন করতে পারেন এতে আপনার কাজের সময় ঘোর ভাব বা ঝিমুনি আসবে না।

Tetrasol Solusion এর দাম ২০২৫

এটির একটি ৩০ml এর বাজার মূল্য ১২৫ টাকা।তবে ইদানিং এর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ও বাজারে প্রয়োজন অনুযায়ী কম থাকায় এই ঔষধ টি আন্ডার রেটেড হয়ে গেছে।তাই কখনো কখনো এর এক শিশির দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা হয়ে থাকে। একটি বোতল আপনি সবোচ্চ তিন দিন ব্যাবহার করতে পারবেন।এটি রূম টেম্পারেচারের ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর নিচে শুষ্ক স্থানে রাখুন ।এবং অবশ্যই শিশুদের হাতের নাগালের বাইরে রাখুন।

কারা টেটরাসল সলিউশন ব্যাবহার করতে পারবেন না

এই সলিউশন দুই বছরের নিচের বাচ্চারা ব্যাবহার করতে পারবে না। এছাড়া গভবতী মা ও স্তন্যদানকারী
মায়েরা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যাবহার করবেন।গরভের বাচ্চার উপর ইফেক্ট ফেলতে পারে এমন কোন ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকুন।

এটি ব্যাবহারে রেজিস্টাড ডাক্তারের পরামর্শ কেন নিবেন?

অনেকেই আমরা এর ওর কোথা শুনে বিভিন্ন ঔষধ খেয়ে ফেলি।সকলের শরীর এক রকম নয়।এক এক জনের শরীর বিভিন্ন ঔষুধ এর প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হতে পারে।বিভিন্ন নতুন অসুখ দেহে বিস্তার লাভ করতে পারে ভুল ট্রিট্মেন্ট এবং ভুল ওষুধ খাবার ফলে।

র‌্যাশ ,তক লালচে হয়ে যাওয়া,চুল ঝরে পড়া,মাথা ব্যাথা, বমি ভাব ,কিডনির উপর চাপ ইত্যাদি হতে পারে।এজন্য আপনার উচিৎ একজন রেজিস্টাড ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর ওষুধ খাওয়া।অনেকে বহুদিন ধরে একই ওষুধ খেয়ে থাকেন,এই অভ্যস্থতা ছাড়ুন,এতে পরে অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আপনি যেই ওষুধই ব্যাবহার করুন না কেন অবশ্যই লেবেল পড়বেন মেয়াদ দেখে ও সঠিক খুচরা মূল্য দেখে ওষুধ ক্রয় করবেন।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি উপরোক্ত আলোচনার পর আমি টেটরাসল সলিউশন ব্যবহারের নিয়ম, এর বিভিন্ন উপকারিতা ও এটি এপ্লাই এ সতর্কতা  সম্পর্কে  আপনাদের কে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে পেরেছি।এভাবে ঔষধ ব্যাবহার করে আপনি লাভজনক ফলাফল পেতে পারেন।কন্টেন্ট টি ভাল লেগে থাকলে বেশি বেশি শেয়ার করুন যাতে করে আরোও মানুষ তথ্য পেতে পারে।এমন আরো ইনফরমেটিভ তথ্য পেতে মুনিরাইফো এর সাথে থাকুন।এতক্ষন সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url