সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের ১৫ টি উপকারিতা ২০২৫

 সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের ১৫ টি উপকারিতা ২০২৫

লজ্জাবতী গাছ সম্পর্কে আমরা কম বেশি সকলেই পরিচিত।কিন্তু আপনি কি সাদা লজ্জাবতী গাছের ভেষজ গুন ও এর শিকড়ের উপকারিতা কি তা জানেন?তাহলে পাঠক আপনি সঠিক জায়গাতেই এসেছেন।আজকের কন্টেন্ট এ বিস্তারিতভাবে জানাবো সাদা লজ্জাবতী গাছের বিভিন্ন ঔষধি গুন এবং উপকারিতা।সেই সাথে আপনি এর ব্যাবহার সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।



পেজ সূচিপত্রঃ

সাদা লজ্জাবতী গাছ কি ধরনের গাছ এবং কোথায় পাওয়া যায়?

এটি একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।এই গাছের পাতার কোষগুলো পানি ও খনিজ পদার্থে পরিপূর্ণ থাকে, এবং রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে পানি ও খনিজ লবণ বের হয়ে গেলে বা স্পশ পেলে কোষগুলো চুপসে যায় এবং গাছের পাতা বন্ধ হয়ে যায় বা নুইয়ে পড়ে, তাই একে লজ্জাবতী বা অনেকেTOUCH ME NOTহিসেবে চিনে থাকবেন ।

এর লজ্জাবতীর বৈজ্ঞানিক  নাম মিমোসা পুডিকা (Mimosa pudica )।পুডিকা একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ লাজুক। এর পাতাতে কোন ভাবে ঝাঁকুনি লাগলে এক প্রকার রাসায়নিক সংকেত যায় ,যার ফলে এটি নুইয়ে পড়ে।এটা একধরনের আত্মরক্ষার কৌশল।এই গাছ টি আলোক সংবেদনশীল ।এজন্য রাতে পাতা গুলো বন্ধ করে ফেলে। 

এই  গাছের আর্দ্র ও ছায়াযুক্ত স্থান অতি প্রিয়।গড় এলাকা,পাহাড়ি বিভিন্ন অঞ্চল,বনভূমির খোলা প্রান্তর ,বিরান জায়গা, গ্রাম বাংলার মেঠো পথে আপনি এই গাছের দেখা পেয়ে থাকবেন।এর আদি নিবাস মধ্য আমেরিকার মেক্সিকোতে তবে ,এখন বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

এই গাছের বিভিন্ন ভেষজ গুন 

যে সমস্ত উদ্ভিদের দেহের বিভিন্ন অংশ যেমন-(পাতা, ফুল, ফল, শিকড়, ছাল )ইত্যাদি মানব দেহের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ও দেহে বল ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে তাদের আমরা ভেষজ গাছ বলে থাকি।ঔষধি গুণাবলী সম্পন্ন বিভিন্ন গাছ কে আমরা ভেষজ গাছ বলি।লজ্জাবতী গাছ একটি অন্যতম প্রাচীন ভেষজ গুন সম্পন্ন গুল্ম জাতীয় গাছ।

ত্বকের কালো দাগ,ব্রণ, বিভিন্ন স্পটস,গাঁট ও স্নায়ুবিক ব্যথা, আর্থ্রাইটিস,কফ, নাক ও কান থেকে রক্ত পড়া, ডায়রিয়া, প্রদাহ, আলসার, কুষ্ঠ এবং যোনি পথের রোগ,প্রদাহ উপশমে,কানে পুঁজ হলে বা কান পাকা সমস্যায়,গলা ব্যাথা,টন্সিল এর ফোলা সারাতে সাদা লজ্জাবতী গাছের ব্যাবহার রয়েছে।এর বীজের গুঁড়ায় প্রদাহ নাশক থাকে,পাতা ও শিকড়ের পেস্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও ইমিউন সিস্টেম কে উন্নত করে।
 

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এর প্রাচীন ব্যাবহার

প্রাচীনকাল থেকেই এই গাছটি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যাবহার হয়ে আসছে।এটি মূলত ৫০০০ বছর পুরনো ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি।এই গাছে প্রদাহ বিরোধী কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কিছু অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।আমাদের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত বা প্রদাহ হলে এই গাছে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এগুলো উপশমে সাহায্য করে।শরীরের ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলির বিরুদ্ধে কাজ করে এবং ক্ষতিগ্রস্থ কোষ গঠনে সাহায্য করে।

আমাদের আশেপাশে অসংখ্য ব্যাক্টেরিয়া ঘুরে বেড়ায়।এই গাছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল  এজেন্ট রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমিয়ে আনে।লজ্জাবতী গাছের নির্যাস এ সমস্ত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল যৌগ বহন করে।এর পাতা, ফুল, শিকড় ও অন্যান্য বিভিন্ন অংশ আয়ুর্বেদিক ও ভেষজ চিকিৎসায় ব্যাবহার করা হয়।কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে এটি এন্টিবায়টিক এর বিকল্প হিসেবে ব্যাবহার করা উচিৎ নয়।

সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের ১৫ টি উপকারিতা

ক্ষত সারাতেঃবিভিন্ন স্থানে আঘাত পাওয়ার কারনে ঘা তৈরী হয়।এর শিকড়ের রস দেহে ওই ক্ষতস্থানে লাগালে দ্রুত রক্তজালক তৈরী হয় এবং ক্ষত দ্রুত সুকিয়ে যায়।এটি দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

ডায়রিয়া ও আমাশয় নিরাময়েঃএই রোগে আমাদের দেহ থেকে অতিরিক্ত পরিমাণ পানি বের হয়ে যায়।পেটে যন্ত্রনা দায়ক ব্যাথা তৈরী হয়।দেহে খারাপ ব্যাক্টেরিয়া গুলো কে মারতে এবং শেত রক্তের কারযক্ষ্মতা এটি বাড়ায়।

কন্সটিপেশন এর সমস্যাঃএর শিকড়ের পেস্ট ১০ থেকে ১২ গ্রাম সেবনের মাধ্যমে আপনার কোষ্ঠ কাঠিণ্য দ্রুত সেরে যাবে।

শ্বাসকষ্টঃঅনেকের হাঁপানি বা এজমা জনিত সমস্যা থাকে। লজ্জাবতীর শিকড় ও পাতার রস শ্বাসনালীর প্রদাহ দূর করে।কফ থাকলে তা তরল করে এবং কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।

দাঁতের মাড়ির বিভিন্ন সমস্যাঃঅনেকের দাঁত ও মাড়ি হঠাৎ ফুলে ওঠে এবং শিড়শিড় করে ।এর শিকড়ের
পেস্ট কুসুম পানিতে মিশিয়ে কুল্কুচি করলে উপকার পাওয়া যায়।অনেকের মাড়ি ফুলার ব্যাথাতে ঠিক মত খেতে পারেন না এটি এখানে মারাত্মক কারযকর।

এই গাছের অপকারিতা সমূহ

লজ্জাবতী গাছ যদিও আমাদের সকলের কাছেই কম বেশি ভেষজ গুন সম্পন্ন একটি গাছ। তবে আমাদের কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।আমাদের সকলের তকে  H1 রিসেপ্টর আছে।এটি ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া দেখায়।যাদের তক অনেক সংবেদনশীল তাদের এই গাছ সেবন থেকে দূরে থাকা উচিৎ।এই গাছ কিছু ক্ষেত্রে জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

তাই  গর্ভবতী মা ও স্তন্যদানকারী মায়েদের এই ভেষজ ট্রিট্মেন্ট করার আগে পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।স্পর্শ এর মাধ্যমে আনেকের অ্যালার্জি বা চুলকানি ছড়িয়ে পড়তে পারে ।যাদের ফসলি জমি রয়েছে তাদের এই গাছ দ্রুত অপসারন করা লাগবে।নাহলে , অনেক তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে অন্য গাছের ক্ষতি করবে এবং মাটির গুনাগুন কমিয়ে ফেলতে পারে।

এর শিকড়ের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা?

লজ্জাবতীর শিকড়ের বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।এর শিকড়ের অতিরিক্ত ব্যাবহার শরীরে বিষক্রিয়া তৈরী করতে পারে।গাছের নির্যাস বা রস গ্রহণ করলে এটি মূলত দেখা দেয়।মানুষের ত্বকে লজ্জাবতী গাছ স্পর্শ করার মাধ্যমে চুল্কানি বা এলারজিক রিয়েকশন দেখা দিতে পারে।যাদের সেন্সেটিভ স্কিন তাদের এই গাছের শিকড় বা নির্যাস থেকে সাবধান থাকতে হবে।

গবাদিপশু এই গাছ খেলে হজমে সমস্যা বা বিষক্রিয়া হতে পারে বা মারা যেতে পারে।SLEEPING CYCLE বা নিদ্রার যেই সময় সেখানে ব্যাঘাত ঘটবে।অনিদ্রা হতে পারে অনেকের ক্ষেত্রে।বিশেষ করে যারা ইন্সমনিয়াক এর রোগী তাদের সাবধান হওয়া উচিৎ।কিছু গবেষনায় দেখা গেছে এটি খাদ্য হজমে সমস্যা তৈরী করছে আবার মস্তিস্কে খারাপ প্রভাব ফেলছে।

গাছের শিকড় সংরক্ষন এর পদ্ধতি

  • শিকড় গুলো ভালভাবে কয়েকবার পানি দিয়ে ধুয়ে ধুলাবালি বা ময়লা মুক্ত করুন।এক্ষেত্রে , আপনি পরিষ্কার পানি ব্যাবহার করুন।
  • এরপর পাঁচ থেকে ছয় দিন কড়া রোদে শুকিয়ে নিন।
  • এবার আপনি চূর্ণ করে বা খন্ড করে বায়ুরোধী বোয়ামে বা প্যাকেটে ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষন করতে পারেন।
  • সংরক্ষিত শিকড় আপনি প্রয়জোন অনুসারে ব্যাবহার করতে পারবেন।

এ গাছের অন্যান্য ব্যাবহার

লজ্জাবতী গাছ মারাত্মক ঔষধি গুন সম্পন্ন একটি উদ্ভিদ।এর বেশ কিছু অনন্য ব্যাবহার রয়েছে।
  • কিছু ক্ষেত্রে এটা সাপের কামড়ের ক্ষতস্থানে ব্যাবহার করা হয়।
  • এটি ত্বক কে হাইড্রেটেড করে,মলিনতা দূর করে,উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ও লাবণ্যময় করতে সাহায্য করে।
  • ডায়রিয়া বা আমাশয় রোগে এর শিকড় ও পাতার রস আপনি ব্যাবহার করতে পারেন।
  • অনেকের নাক ও কান থেকে রক্ত পড়ে ।এটি অতিরিক্ত শীত বা গ্রীষ্মে বেশি হয়ে থাকে।আপনি রস ব্যাবহার করে উপকার পেতে পারেন।
  • লজ্জাবতীর মূল হেমোরয়েড রোগের ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয়।
  • পুরনো ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে।
  • ফোলা, ব্যথা এবং অস্থিসন্ধির ব্যথা উপশমে সাহায্য করে।
  • দাঁত ও মাড়ির ক্ষত সারাতেও কার্যকরী ।

গাছামো ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে কেন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন?

আমরা অনেকেই পরামর্শ ছাড়া অনেক ঔষধ খেয়ে থাকি ।হয়তো কারো কাছে শুনেছি বা অন্য কেউ খেয়ে রোগ ভাল হয়ে গেছে এর উপর ভিত্তি করে হারবাল ট্রিটমেন্ট এ চলে যাই।এতে অনেক সময় হিতে বিপরীত হতে পারে।আবার এমনও দেখা যায় অনেকে ডাক্তারের কাছে যেতে অলসতা করে থাকেন।

মানুষের শরীরে অনেক গাছামো ঔষধ এলার্জিক রিয়েকশন বা সংবেদনশীলতা অতি মাত্রায় বাড়িয়ে তুলতে পারে।দেখা গেল রোগ আরোও ছড়িয়ে পড়লো।তাই, কোন ঔষধ সেবনের আগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।সঠিক রোগ সনাক্ত করে চিকিৎসা করুন।

শেষ কথা

আশা করছি উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমি সাদা লজ্জাবতীর শিকড়ের নানাবিধ ব্যাবহার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য আপনাদের কাছে তুলে ধরতে পেরেছি।আমরা এখন কারনে অকারনে বিভিন্ন মেডিসিন সেবন করে থাকি,আর অনেক সময় প্রতিকার পাই না।পরিবেশের অনেক ভেষজ উপাদান এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর রেমেডি হিসেবে আমাদের কাজে দিতে পারে।দ্রুত রোগ উপশম করতে পারে।

আমার কন্টেন্ট ভালো লেগে থাকলে বেশি বেশি করে শেয়ার করুন, যাতে করে আরো অনেকে উপকৃত হতে পারেন।এতক্ষন সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।আরও ইনফরমেটিভ তথ্য পেতে মুনিরাইনফোর সাথে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url