সিনামিন সিরাপ খাওয়ার ৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা
সিনামিন সিরাপ খাওয়ার ৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা
আপনি কি সিনামেন সিরাপ সম্পর্কে জানতে চান? এটি কোন রোগের
ঔষধ,এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন? তাহলে আজকের কন্টেন্ট টি পড়ে আপনি উপকৃত
হবেন পাঠক ।নিচে বিস্তারিতভাবে সিনামেন সিরাপ ও এর কার্যকরীতা সম্পর্কে
আলোচনা করা হয়েছে।
পেজ সূচিপত্রঃ
সিনামিন সিরাপ কি?
এটি সবচেয়ে শক্তিশালী হিস্টামিন H1-রিসেপ্টর ব্লকিং এজেন্টগুলির মধ্যে একটি যা
একটি শক্তিশালী অ্যান্টিহিস্টামিন হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত
প্রোমেথাজিনের তুলনায় কম অবশ করে। ক্লোরফেনিরামিন ম্যালেট প্রতিযোগিতামূলকভাবে
H1-রিসেপ্টর ব্লক করে এর প্রভাব প্রয়োগ করে।এটি মুলত Anti Agent হিসেবে কাজ
করে।
ঠান্ডা লাগা ,ফ্লু,অ্যালারজি,শাস প্সহাশে সমস্যা যেমন-ব্রংকাইটিস ইত্যাদির
ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।কারও ইমিউন সিস্টেম এ সমস্যা হলেই বিভিন্ন আলারজি এটাক
শুরু হতে পারে।এই সিরাপে থাকা "Chlorpheniramine" ক্রমাগত চোখ ও নাখ দিয়ে পানি
পড়া ও হাঁচি আটকাতে বেশ কার্যকরী।প্রতি সিনামিন ট্যাব্লেটে ৪
মি.গ্রা. Chlorpheniramine Maleate USP থাকে এবং সিরাপ এর প্রতি ৫ ml এর
মধ্যে ২ মি.গ্রা. Chlorpheniramine Maleate থাকে।
সিরাপ টি কোন কোন রোগের জন্য ব্যবহার করা হয়?
বিভিন্ন চুলকানী জাতীয় রোগ, কোল্ড এলার্জি, ব্রংকাইটিস, শাসকষ্টের সমস্যা,
আম বাত জনিত সমস্যা, তীব্র হাঁচি-কাশি, কীট পতঙ্গের কামড়ে আক্রান্ত
হলে , নাক ঠান্ডা লেগে একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে, হাঁপানি রোগ বা এজমা এটাক এর
ক্ষেত্রে ,খড়-জ্বর,ছুলি রোগ, অনেক বিষাক্ত ছত্রাকের সংক্রমনে শরীরে ঘা বা ফোসকা
দেখা দিলে ও অনেক ডাক্তার এই সিরাপ খাবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই সিরাপের
শরীরে ইফেক্ট ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা পরজন্ত থাকতে পারে।
সিনামিন ট্যাব্লেট ও সিরাপ খাবার নিয়ম
এই ঔষধ টি সিরাপ ও ট্যাব্লেট দুই ভাবেই বাজারজাত করা হয় ।তবে অবশ্যই যেকোন সিরাপ
খাবার আগে আপনার উচিত রেজিস্ট্রারক্রিত ডাক্তারের পরামরশ নেওয়া।ছোট ও বড় উভয়েই
সিরাপ টি সেবন করতে পারেন।
ছোট শিশুদের জন্য সিনামিন ট্যাব্লেট খাওয়ার নিয়মঃ
৬ থেকে ১২ বছর-২মিগ্রা (চার থেকে ৬ ঘন্টা পরপর)
২ থেকে ৫ বছর-১ মিগ্রা (চার থেকে ৬ ঘন্টা পরপর)
১ থেকে ২ বছর - ১ মিগ্রা (সারা দিনে)
প্রাপ্ত বয়স্করা প্রতি ৪ মিগ্রা (চার থেকে ৬ ঘন্টা পরপর) খাবে।
সারাদিনে সরবচ্চ ২৪ মিগ্রা সেবন করতে পারেন।
এর ৫ টি উপকারীতা ও অপকারীতা
সাধারন সর্দি ও কাশির ক্ষেত্রেঃবিভিন্ন ভাইরাস জনিত কারনে ঊর্ধ্ব শ্বাসপথ,
বিশেষ করে নাকে আক্রমণ এর ফলে ক্রমাগত নাক চুলকাতেই থাকে ,নাক দিয়ে অঝরে
পানি পড়ে।গলবিল, অস্থিগহ্বর ও স্বরযন্ত্র ও আক্রান্ত হতে পারে।সিনামিন সিরাপ খেলে
স্নায়ু শিথিলতার কারনে রোগী কিছুটা রিলিফ পায়।
গলার কফ বা শ্লেসা উপশম এ সহায়তা করে।শ্বাসনালির ক্রিয়া সঠিক রাখতে সহায়তা
করে।গলার ভেতরের অংশে যে চুলকানি বা অস্বস্তি দূর করতে সাহায্য
করে।পীড়া অনেকাংশে কমিয়ে আনে।
চুলকানিঃসিনামিন এ অ্যান্টিহিস্টামিন থাকে যা চুলকানি কমিয়ে আনতে
সাহায্য করে।শুষ্ক ত্বক,অ্যালার্জি, চর্মরোগ (যেমন একজিমা, সোরিয়াসিস), বা
অভ্যন্তরীণ কিছু রোগের কারণে চুলকানি হতে পারে। আবহাওয়ার পরিবর্তন,
মানসিক চাপ, এবং কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়া থেকেও চুলকানি হতে পারে। এই সিরাপ
H1রিসেপ্টর ব্লকিং করে চুলকানির অস্বস্তি কে কমিয়ে আনে।
পোকামাকড় এর কামড়ঃ কীট পতঙ্গের কামড়ে শরীরের যে কোন স্থানে ফোস্কা ঘা দেখা
দেয়,চামড়ায় দানা সহ র্যাস দেখা দেয়।এধরনের ইনফেকশন প্রতিরোধে সিনামিন সিরাপ
অতিমাত্রার সংক্রমন কমিয়ে আনে।এবং নিয়মিত সেবনের ফলে রোগী আরামবোধ করে।
ছত্রাকের সংক্রমনঃযা মাইকোসিস নামেও পরিচিত, ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট রোগ। শরীরের
বিভিন্ন অংশ গতানুগতিকভাবে আক্রান্ত হতে পারে,পৃষ্ঠীয়, ত্বকনিম্নস্থ এবং সমগ্র
দেহ। উপরিভাগের ছত্রাক সংক্রমণের মধ্যে রয়েছে ত্বকের সাধারণ টিনিয়া, যেমন
শরীরের টিনিয়া, কুঁচকি, হাত, পা এবং দাড়ি এবং খামির সংক্রমণ যেমন ছুলি।ছুলি বা
আমবাত চামড়ার উপর একটি জ্বলন্ত বা যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতির সৃষ্টি করতে পারে
।সিনামিন সিরাপ এই ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি কমিয়ে এনে ত্বক
এর অস্বস্তি কমিয়ে আনে।
মোশান সিকনেস ও বমি-বমি ভাবঃমোশনের কারণে যে অসুস্থতা সেটিই মোশন সিকনেস।মানুষ
ভ্রমন এর সময় বাস , ট্রেন, স্টিমার ইত্যাদি তে উঠে তখন বমি বমি
ভাবের অস্বস্তিকর অনুভূতি তৈরী হয়।এই সিরাপ ভ্রমন জনিত বমি প্রতিরোধে ভূমিকা
রাখে।
কোল্ড এলার্জি জনিত সমস্যাঃঠান্ডা কোন কিছুর সংস্পর্শে আসার পর, শরীর
হিস্টামিন এবং অন্যান্য প্রদাহজনক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে, যা অ্যালার্জির
লক্ষণ তৈরি করে। ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি হওয়া, ফোলাভাব, বা শ্বাসকষ্ট
হতে পারে সেই ক্ষেত্রে এই সিরাপ বেশ কার্যকর।
এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন?
প্রত্যেকটি ঔষধের কিছু সাইড ইফেক্টস থাকে।যেহেতু সিনামিন একটি হিস্টামিন জাতীয়
ওষুধ এবং এলার্জি দমনে কাজ করে তাই এটি খাবার পর মানব দেহে বিভিন্ন ক্ষতিকর
প্রভাব দেখা দিতে পারে।
- ঝিমুনি ভাব
- ঘোরের মত লাগা বা ডিস ব্যালেন্স ভাব
- বমি বমি লাগা
- দৃষ্টি ঝাপসা বা Blurry হতে পারে
- মাথায় হঠাৎ তীব্র যন্ত্রনা
- অতিরিক্ত খেলে পেট ব্যাথা ও পায়খানা হয়ে যেতে পারে
- আপনার পালস রেট এর অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে
- শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে
- অতিরিক্ত খেলে ডিপ্রেশন, হ্যালুসিনেশন,খিঁচুনি উঠা,চোখের মণি বড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এটি কি শরীরে ঝিমঝিমানি ভাব আনতে পারে?
পরিবেশের কোন কিছুর প্রতি মানব দেহের ইমিউন সিস্টেমের
অতি সংবেদনশীলতাকে এলার্জি বলা হয়। এটি একেক জনের ক্ষেত্রে একেক
রকম।সিনামিন এক ধরনের এন্টি হিস্টামিন।এ জাতীয় ঔষধ আমাদের Nervous System কে
স্থবির করে দেয়।
তাই আমাদের শরীরে ক্লান্তি বা ঝিমঝিমানি ভাব আসতে পারে।সিনামিন কিছু
ক্ষেত্রে পৌষ্টিক তন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।আপনাদের মধ্যে যারা CaCl2,
নরআড্রিনালিন এসিড টারট্রেট জাতীয় ঔষধ খান তাদের দেহে প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে
পারে। যাদের ক্লোরফেরামিন এ এলার্জি আছে তারা এবং নবজাতক দের জন্য
এ ঔষধ একদমই খাওয়া যাবেনা।
সিনামেন সিরাপ এর দাম ২০২৫
সিনামেন সিরাপ ১০০ মিলি বোতল আকারে বাজার জাত করা হয়।এটির খুচরা মুল্য ২৭ থেকে ৩০
টাকার মধ্যে আপনি যেকোন ফার্মেসি বা মেডিকেল স্টোর থকে কালেক্ট করতে
পারবেন।শিশু এবং প্রাপ্ত বয়স্ক সিনামেন সিরাপ হিসেবে সেবন করতে পারবেন। তবে
যেকোন ঔষধ ক্রয় এর আগে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য MRP এবং
মেয়াদ উত্তীর্ণ এর তারিখ ভালোভাবে দেখে কিনবেন।সকল ঔষধ শিশুদের হাতের
নাগালের বাইরে রাখুন।
সিনামেন ট্যাব্লেট এর দাম ২০২৫
এটি ইবনে সিনা ফারমাসিটিকাল একটি পণ্য।বাজারে এটিকে হিস্টাসিন হিসেবেও অনেকে বলে
থাকেন।এটির মূল উপাদান ক্লোর ফেনিরামিন।একটি পাতায় মোট ১০ টি করে বড়ি
থাকে।প্রতিটি বড়ি ৪ মি. গ্রা. সিনামেন ট্যাব্লেট এর দাম ৩ টাকা। এটি প্রস্তুত
করেছেন দ্যা ইবনে সিনা ফারমাসিক্যাল কোম্পানী। আপনি পুরো পাঁচ স্ট্রীপ এর প্যাকেজ
একসাথে নিলে ১৫০ টাকা পড়বে। তবে মারকেটে মজুদ হিসেবে দাম বাড়তে বা কমতে পারে।তবে
ট্যাব্লেট এর চেয়ে সিরাপের দাম তুলনামূলক কম।
এই ঔষধ সেবনে সতর্কতা
- যেহেতু এটি এন্টি হিস্টামিন জাতীয় দ্রব্য তাই এটি সেবনের পর ঘুম ঘুম ভাব বা ঝিঁমুনি আসতে পারে।তাই এটি খেয়ে কখনই গাড়ি চালান উচিৎ না। গাড়ির নিয়ন্ত্রন হারিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা হতে পারে।
- ১ বছরের নিচে বাচ্চাদের খাওয়া একদম নিষিদ্ধ।
- গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের এই ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।নাহলে, বাচ্চা ও মা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। মায়ের পেটে থাকা সন্তানের উপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
- যাদের কিডনীর সমস্যা আছে তাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন করতে হবে।
- যাদের Insomnia আছে তাদের এটি সেবনে রোগ আরোও বেড়ে যেতে পারে।
- অম্বল জাতীয় সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত খাওয়া ত্যাগ করুন।
- ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।
শেষ কথা
সিনামিন সিরাপ কি জাতীয় ঔষধ এবং কোন কোন রোগে এটি সেবন করবেন আশা করি উপরোক্ত
আর্টিকেল পড়ে জানতে পেরেছেন।এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চুলকানী ও শ্বাসনালীর
বিভিন্ন রোগের পরিশেধক হিসেবে ব্যাবহার করা হয়।তবে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাবহার ও
গুরুতর সমস্যার ক্ষেত্রে অবশ্যই রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন পারলে
নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
নবজাতক বাদে শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ সিনামিন সিরাপ সেবন করতে পারেন।সকলে
ভাল থাকুন, সুস্থ্য থাকুন এবং আরোও এমন তথ্যবহুল কন্টেন্ট পেতে মুনিরা ইনফোর সাথে
থাকুন। বেশি বেশি শেয়ার দিয়ে আপনার কাছের মানুষদেরও উপকৃত করুন।এতক্ষন সাথে
থাকার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url