১০ টি সেরা উপায়ে কিভাবে ইনডোর গাছের যত্ন নিবেন

 ১০ টি সেরা উপায়ে কিভাবে ইনডোর গাছের যত্ন নিবেন

আপনি কি ইনডোর প্ল্যান্ট এর যত্ন নিয়ে চিন্তিত,তাহলে আজকের কনেন্ট টি আপনার জন্য অনেক উপযোগী। আজকাল আমরা ঘর সাজানোর জন্য বা যারা গাছ প্রেমি আছি, কিন্তু গাছ লাগানোর তেমন জায়গা নেই তারা ইনডোর গাছ খুবই পছন্দ করি। 

কম আলো,পানি ও সল্প জায়গাতে খুব সহজেই আপনি ইনডোর প্ল্যান্ট লাগাতে পারবেন। কিন্তু, সঠিক পদ্ধতিতে যদি আপনি যত্ন নিতে না পারেন আপনার চারা গাছ মারা যেতে পারে বা গ্রোথ কমে যেতে পারে।

পেজ সূচিপত্রঃ

ইনডোর গাছ কোন গুলো?

যেসমস্ত গাছ ঘরের ভেতরে টবে বা অন্য কন কন্টেইনারে লাগান হয় এবং ঘরোয়া পরিবেশের সাথে সহজেই ক্ষাপ খাওয়াতে পারে তাদের ইনডোর গাছ বলে। হাউসপ্ল্যান্ট আমাদের ঘর এবং অফিসে খুব সহজেই লাগানো যায় ।বায়ু বিশুদ্ধকরণ ও মানসিক স্বস্তি প্রদান বা ডিপ্রেশন কমাতে ইনডোর প্ল্যান্ট অনেকভাবে সাহায্য করে।

হোম ডেকোর এর জন্য কিছু প্ল্যান্টস যেমন- মানি প্ল্যান্ট, কয়েন প্ল্যান্ট, স্নেক, ফার্ন,নিয়ন,মারবেল ,পাম গাছ,স্পাইডার প্ল্যান্ট এর চাহিদা আজকাল অনেক বেশি।বিভিন্ন ব্রিকশ মেলা বা অনলাইনে আপনি খুব সহজেই এসব গাছ সংগ্রহ করতে পারেন।ঘরয়া এসব গাছ সরবচ্চ ২ ফুট হতে পারে। স্নেক প্ল্যান্ট নাইটজেন রিলিজ করে যা আপনার স্টেরেস কমাতে সাহায্য করে।বেশ কিছু গাছ 'কর্টিসোল' নামক হরমোন ত্যাগ করে যা আপনার মানসিক প্রশান্তিতে সাহায্য করে। 

ইনডোর প্ল্যান্ট রোপনের বিভিন্ন পদ্ধতি

আপনি বীজ,চারা বা কাটিং থেকে প্ল্যান্ট রোপন করতে পারেন।শেখেত্রে, কাছাকাছি কোন নারসারি বা অনলাইনে বীজ সংগ্রহ করতে পারেন।বীজ থেকে মূল চারা বের হবার ৫-৭ দিনের মধ্যে আপনি মাটিতে লাগাতে পারেন।সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখুন এবং দিনে ২ বার পানি স্প্রে করুন।মাটি ভালমতো তৈরী করে নিতে হবে।

ইনডোর গাছ কাটিং থেকে খুব দ্রুত হয়।সেক্ষেত্রে আপনাকে একটি সুস্থ্য ও ম্যাচিওর ডাল নির্বাচন করতে হবে। ডাল টি ৪৫ ডীগ্রি আংগেলে কাটুন ,যে অংশ মাটিতে পুঁতবেন সেটিতে হলুদ বা ফাঁংগাস নিরোধক ওষুধ লাগাতে পারেন এরপর মাথার অংশ পলি দিয়ে বেঁধে দিতে পারেন।এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন পাতা গজানোর পর আপনি কাটিং থেকে নতুন চারা তৈরী করতে পারবেন। বেশিরভাগ ইনডোর গাছ কাটিং থেকে সরাসরি মাটিতে লাগালেও হয়।

আজকাল অনেকে মাইক্রো প্ল্যান্ট হোম ডেকোরেশনের জন্য আয়্যকুরিয়ামে, বারান্দায় ব্যাবহার করে থাকে।আপনি যেকনো ফেলনা জিনিস ,বোতল,জার বা টবে গাছ লাগাতে পারেন।এছাড়া যেগুলো আয়্যকুয়া প্ল্যান্ট সেগুলো শুধু পানিতে রাখলেই বেড়ে উঠবে।কোকোপিড,রঙ্গিন পাথর ইত্যাদি আপনি ব্যাবহার করতে পারেন।রূম টেম্পারেচার, হিউমিডিটি,পানি এগুলোর দিকে খেয়াল রাখবেন।হঠাট খুব গরম বা ঠান্ডা পানি দিবেন না। গাছের পাতা নেতিয়ে পড়লে রোদে রাখুন ।সেমি ইনডোর প্ল্যান্ট এর ক্ষেত্রে আপনাকে দিনের কিছুটা সময় তাপ সরবরাহ করতে হবে।

ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে সার বানাবেন

ঘরের রান্নার পর বা যেসমস্ত সামগ্রী আমরা ফেলে দেই জেমন-ডিমের খোসা, কলার খোসা , শাক-সব্জির খোসা,পচনশীল অংশ এগুলো দিয়ে আমরা ঘরোয়া উপায়ে সার বানাতে পারি।চা পাতার গুড়া এসব কিছু একসাথে মাটির সাথে মিশিয়ে জল যোগে ৪০-৬০ দিন রেখে দিলে আপনা আপনি সার প্রস্তুত হয়ে যাবে ।

মাটি ও বর্জ্য পদার্থের মিশ্রণে গোবর মিশালে আরো ভাল হয়।স্তূপটি নিয়মিতভাবে উল্টেপাল্টে দিতে হবে যাতে পচন ভালমতো সম্পন্ন হয় এবং আর্দ্রতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।গাছের ব্রিধির জন্য প্রয়জোনীয় সব খনিজ উপাদান গাছ আয়ন হিসেবে মাটি থেকে গ্রহন করে।আপনি চাল বা ডাল ধোয়া পানি ব্যাবহার করতে পারেন।

Indoor Plant এর রিপটিং এর গুরুত্ব

একটি ইনডোর গাছের বৃদ্ধি ও সতেজতা ধরে রাখতে নতুন টবে প্রতিস্থাপন বা Repotting অত্যন্ত জরুরী।
অনেক সময় দেখা যায় টব থেকে অতিরিক্ত শিকড় বেড়িয়ে এসেছে, বা অনেক দিন একই মাটিতে থাকলে মাটির গুন কমে যায়, যার ফলে গাছ প্রয়জোনীয় নিউট্রিয়েন্টস থেকে বঞ্চিত হয়।গাছের শিকড়ে
পচন ধরতে পারে ,পাতা নিস্তেজ হয়ে মারা যেতে পারে।

প্রতি ১-২ বছর পর পর ইনডোর গাছের রিপটিং করা দরকার।অস্বাস্থ্যকর মাটিতে আপনার প্ল্যন্ট এর বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে।টবের মাটি তার গুণমান যত ভাল হবে গাছের পাতা ততো সতেজ সবুজ হবে এবং গাছের অতিরিক্ত শিকড়ের জন্য পানি নিষ্কাশন ব্যাবস্থা ব্যাহত হবে না।শিকড় পচা রোগ থেকে গাছ মুক্তি পাবে।

আপনার গাছগুলোর কাটিং তৈরি করা ও সংরক্ষণ

একটি সুস্থ্য ও রোগমুক্ত গাছ থেকে আপনাকে ম্যাচিওর ডাল নিতে হবে ।এধরনের ডাল সাধারনত গাড় বাদামী রং এর হয়ে থাকে।ডালের আগার দিক ৪-৬ ইঞ্চি পরিমাণ ৪৫ ডিগ্রী এঙ্গেল করে কেটে নিন।যদি আপনি মাটিতে চারা বানান তাহলে মাটির সাথে বালু মেশান।

যে অংশ টি মাটিতে দিবেন সেখানে হলুদ বা ফাংগাস মুক্ত করার ওষুধ ব্যাবহার করতে পারেন। পাতা রাখবেন না ,উপরের অংশ এয়ার টাইট পলিদিয়ে বেঁধে দিন।২-৪ সপ্তাহের মধ্যে কাটিংয়ে শিকড় দেখতে পাবেন।অন্ধকার এবং শুষ্ক জায়গায় এবং সরাসরি আলো থেকে দূরে কোন স্থানে সংরক্ষণ করুন।অতিরিক্ত আর্দ্রতা নতুন শিকড় গজিয়ে উঠতে বাঁধার কারন হয়ে দাঁড়ায়। কাটিং পর্যবেক্ষণ করতে হবে নিয়মিত এবং প্রয়জোনীয় পানি ও সার দিতে হবে।


উপযোগী আবহাওয়া ও স্থান নির্বাচন

ঘরের ভেতরে গাছ লাগাতে চাইলে আপনার বিভিন্ন ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। কিছু গাছ আবার সেমি ইনডর হয়ে থাকে । এর মানে এই গাছ কে বাঁচাতে দিনের কিছু সময় আলো সরবরাহ করতে হবে।একদম ছায়া তে এ গাছ বাঁচে না।
আলোর উৎস নির্বাচনঃ
কিছু গাছপালা কম আলোতে ভালো জন্মাতে পারে, যেমন পটোস, স্নেক প্ল্যান্ট, মানি প্ল্যান্ট ইত্যাদি। এই গাছগুলো সাধারণত উজ্জ্বল আলো থেকে দূরে রাখাই ভালো। তবে, কিছু গাছের জন্য সূর্যের আলোর প্রয়োজন হয়, যেমন মনস্টেরা।

ঘরোয়া পরিবেশে আদর্শ তাপমাত্রাঃ
ইনডোর প্ল্যান্টের জন্য ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা আদর্শ।এর থেকে অতিরিক্ত রোদ দিলে আপনার গাছ পুড়ে যেতে পারে ,গোড়া পঁচা রোগ ইত্যাদি হতে পারে।

আর্দ্রতার দিকে খেয়াল রাখাঃ
গাছের গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত পানি গাছের শিকড় পচিয়ে দিতে পারে। গাছের গোড়া গলে যেতে পারে, আপনাকে ড্রেনেজ ব্যাবস্থার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।অনেক সময় উপর থেকে দেখা যায় আপনার গাছ নেতিয়ে পড়েছে।ফুল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এর পিছে অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারন থাকতে পারে।

বায়ু চলাচলঃ
গাছপালা পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে এমন স্থানে রাখতে হবে। তবে, খেয়াল রাখতে হবে যাতে গাছের পাতা সরাসরি বাতাসের সংস্পর্শে এসে শুকিয়ে না যায়।

অন্যান্য বিষয়ঃ
গাছের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এমন স্থান যেমন, খুব গরম বা ঠান্ডা বাতাসের উৎসের কাছাকাছি (যেমন, এসি বা হিটার), সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে এমন স্থান, বা টেলিভিশন বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের উপরে গাছ রাখা উচিত নয়। 
এছাড়া জানালার কাছাকাছি কোন স্থান, সাইড টেবিল ইত্যাদি সুন্দর জায়গা বেছে নিন।

১০ টি সেরা উপায় যত্ন নেওয়ার


কিভাবে চারা গাছকে ছত্রাক ও মিলিবাগ থেকে বাঁচাবেন?

চারা গাছকে ছত্রাক ও মিলিবাগ থেকে বাঁচাতে, সঠিক পরিচর্যা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ছত্রাক সংক্রমণ রোধে ভালো নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন, অতিরিক্ত আর্দ্রতা পরিহার করুন এবং আক্রান্ত অংশ দ্রুত অপসারণ করে ফেলুন। মিলিবাগ দমনে, আক্রান্ত পাতা ও ডাল অপসারণ করে ধ্বংস করুন, প্রয়োজনে কীটনাশক ব্যবহার করুন এবং গাছের গোড়ায় আঠাযুক্ত ফিতা ব্যবহার করুন। 

  • ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে পারেন। তবে, ছোট চারার ক্ষেত্রে ব্যবহারের পূর্বে সতর্ক থাকুন। 
  • আক্রান্ত পাতা ও ডালপালা অপসারণ করে তা ধ্বংস করুন।
  • গাছের গোড়ায় পানি জমতে না দিয়ে নিশ্চিত করুন ভালো নিষ্কাশন ব্যবস্থা। অতিরিক্ত পানি ছত্রাক সংক্রমণের অন্যতম কারণ।
  • ইমিডাক্লোপ্রিড, ক্লোরপাইরিফস বা অ্যাসিটামিপ্রিড জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও, এক লিটার পানিতে আধা চা চামচ গুঁড়ো সাবান মিশিয়ে স্প্রে করলে মিলিবাগ দমন করতে পারবেন 
  • এছাড়া গাছের গোড়ায় আঠাযুক্ত ফিতা ব্যাবহার করতে পারেন।
  • মিলিবাগ আক্রান্ত গাছ অন্যান্য সুস্থ্য গাছ থেকে দূরে রাখুন।
  • প্রত্যেক দিন আপনার বাগানের পেছনে সময় দিন।

ইনডোর প্ল্যান্টস এর বিভিন্ন উপকারীতা

বায়ু পরিশোধনঃআমাদের পরিচিত অনেক গাছ আছে যারা আমাদের জন্য ক্ষতিকারক কার্বন মনোক্সাইড ,কার্বন ডাইঅক্সাইড  এধরনের ক্ষতিকর গ্যাস পরিশোধন করে বিশুদ্ধ  অক্সিজেন সরবরাহ করে।যেমন- স্নেক প্ল্যান্ট ।

উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিঃইনডর প্ল্যান্ট খুব দ্রুত বাড়ে আর খুব বেশি যত্নের প্রয়জোন হয় না।আপনি একটি গাছের কাটিং থেকে অসংখ্য চারা গাছ বানিয়ে বা রিপটিং করে উৎপাদন বাড়াতে পারেন।

ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিঃহোম ডেকোরেশনে ইনডর গাছ অনেক সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়।ঘরে সৌন্দর্য বৃদ্ধির
ক্ষেত্রে ,সজীবতা ধরে রাখতে,নির্মল বায়ুর আনায়নে এটি সাহায্য করে।

আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণঃআপনি যেই ঘরে গাছ লাগাবেন সেই ঘরের হিউমিডিটি বজায় থাকবে।অনেক গরমে এই গাছ রুম টেম্পারেচার সঠিক রাখতে সাহায্য করে।

এলার্জি ও রোগ প্রতিরোধঃকিছু ইনডোর প্ল্যান্ট এলার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে, যা ঘরের বাতাসকে আরও স্বাস্থ্যকর করে তোলে।

কম রক্ষণাবেক্ষণঃঅনেক অল্প যত্নেই এ গাছ বেঁচে থাকে,দিনে এক বা দুই বার আপনি গাছ দেখাশোনা করলেই হবে।মানি প্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট, ইত্যাদি হাছ খুব অল্প পরিচর্যাতেই ভালো ফলন দেয়।

মানসিক চাপ কমায়ঃগবেষণায় দেখা গেছে যে ইনডোর প্ল্যান্টের আশেপাশে সময় কাটালে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমে যায়, যা সামগ্রিক সুস্থতার জন্য উপকারী। গাছের সাথে সময় কাটালে আপনার মন ও শরীর উভয়েই ভালো থাকবে।অতিরিক্ত স্ট্রেস এর রোগীদের জন্য গাছ লাগানো মারাত্মক কার্যকরী।

শেষ কথা

আশা করি উপরের আলোচনা আপনার ইনডর প্ল্যান্ট সম্পর্কে যথেষ্ট ধারনা দিবে, কিভাবে আপনার সুস্থ্য শরীর ও মন এর উপর এর প্রভাব রয়েছে বুঝতে পারছেন।ভালো থাকুন ,সুস্থ্য থাকুন।এতক্ষন সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url